Table of Contents
জার্মানীতে থাকার অভিজ্ঞতা
জীবনে চলার পথে আমাদের এমন বহু মানুষের সাথে আলাপ হয় যাদের নামটাও হয়ত জানা হয়না। কিংবা আলাপের স্বল্পতায় নামটা বিস্মৃত হই অথচ মানুষটিকে মনে থেকে যায়। আজ বলব সেরকমই কয়েকজন মানুষের কথা।
ফ্রাংকফুর্ট এয়ারপোর্ট স্টেশনে
প্রথমে যাঁর কথা বলব তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছিল জার্মানীর ফ্রাংকফুর্ট এয়ারপোর্ট স্টেশনে। ২০১২ সালের ১৩ই এপ্রিল। জীবনে প্রথমবার বিদেশের মাটিতে পা রাখলাম বরের সাথে। কলকাতা ছেড়ে থাকার বিরহে মন বড়ই অস্থির তখন। কলকাতার ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে গিয়ে পড়েছি ৩ডিগ্রীতে। গায়ে লম্বা-ঝুল কম্বলের মতো মোটা একটা কোট, মাথায় টুপি, গলায় মাফলার পরা সত্ত্বেও আমি শীতে কাঁপছি তখন।
কিছুক্ষণ আগেই বিমান থেকে নেমেছি, ইমিগ্রেসন পার করে কনভেয়ার বেল্ট থেকে দু’জনের দু’টো বড়ো ট্রলি সুটকেস সংগ্রহ করেছি। কেবিন ব্যাগ ও ট্রলি সহযোগে দুজনে রওনা দিয়েছি রেল স্টেশনের দিকে। আমার কাছে সব কিছুই অজানা তবুও মনোমুগ্ধকর লাগছে তখন।
চলমান সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলাম, পৌঁছলাম রেল স্টেশনে, টিকিট কাটা হল। আমাদের গন্তব্য ৮০ মাইল অর্থাৎ ১২৯ কিলোমিটার দূরের বন নামক একটি শহরে। প্রথমে জিগবুর্গ স্টেশনে পৌঁছে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে হোটেলে যেতে হবে। অফিস থেকে হোটেলের ব্যবস্থা করাই ছিল।
অপেক্ষারত
মালপত্র সহ আমাকে বসতে বলে আমার বর অনতিদূরে পায়চারী করছিল, ট্রেন আসতেও কিছু সময় বাকি ছিল। এক জার্মান ভদ্রলোক আমার পাশের সিটে এসে বসলেন। জার্মান ভাষাতে কিছু জিগ্যেস করলেন। আমি ইংরেজী ছাড়া বুঝতে পারব না জানালাম, এবার ইংরেজীতেই জিগ্যেস করলেন আমার ঘড়িতে ক’টা বাজে, ওনার ঘড়িটা সম্ভবত বন্ধ হয়ে গেছিল।
আমি জানালাম, “আমি ভারত থেকে আজই এসেছি, তাই ঘড়ির সময়টা ভারতীয়, পরিবর্তন করা হয়নি এখনও।” আমাকে দেখিয়ে দিলেন স্টেশনের ঘড়িটা যাতে আমি সময়টা ঠিক করে নিতে পারি। বললেন, ” আপনি আমাদের দেশে প্রথমবার এসেছেন, স্বাগত জানাই, দেখবেন আমাদের দেশটা আপনার খুব ভাল লাগবে।” সত্যিই প্রতি পদে দেশটা আমার খুব ভাল লেগেছিল। আরও কত দেশ দেখলাম তবুও এই দেশটার মতো আপন করে নিতে পারিনি অন্য কোন দেশকে।
খানিক পরে ট্রেন চলে এল, বিদায় জানিয়ে যে যার গন্তব্যে রওনা দিলাম। আর কোনদিনও দেখা হলনা, পরিচয়ও জানা হলনা, তবুও স্মৃতিতে রয়ে গেলেন।
মাত্র ৪৫ মিনিটে দ্রুতগতিসম্পন্ন ট্রেনে জিগবুর্গ স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। স্থানীয় সময় তখন দুপুর ১২ টা মাত্র। ট্রেন থেকে নেমে বাগপত্র নিয়ে প্রথমে লিফটে করে নিচে নামলাম। ষ্টেশনের বাইরে এসে গাড়ি ভাড়া করে হোটেলে যখন পৌঁছলাম তখন স্থানীয় সময় দুপুর একটা অর্থাৎ ভারতীয় সময় বিকেল ৪ টে।
নতুন ঠিকানা
সেই হোটেলে বসবাসের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তার মধ্যেই বাড়ি খুঁজে দিতে অফিসের ঠিক করে দেওয়া সংস্থা থেকে লোক আসবেন, বাড়ি পছন্দ করে নিতে হবে। ১১ দিন পর থেকে সেই বাড়িই হবে এদেশে আমাদের নতুন ঠিকানা, আগামী দেড় বছরের জন্য। তেমন কোন কারণ না থাকলে ঠিকানা বদল করা যাবে না।
আমার বর এই হোটেল থেকেই ট্রেনে করে অফিস যেত প্রতিদিন। হোটেলের ঘরেই এক পাশে ছিল রান্না করার বৈদ্যুতিক চুল্লী আর ২-৩ টে রান্নার বাসন। এছাড়াও ছিল পোর্সেলিনের একজোড়া বড় প্লেট, এক জোড়া বড় বাটি, এক জোড়া ছোট প্লেট আর একজোড়া ছোট বাটি। সাথে আবার একজোড়া কাপ প্লেটও ছিল চা খাওয়ার জন্য। এত স্বল্প সরঞ্জাম দিয়েও যে রান্না খাওয়া চালান যায় তা প্রথম শিখলাম। সেদিন বাঙালী গৃহস্থালী সাজিয়ে নিয়েছিলাম হোটেলের ঘরেই।
একদিন বিকেলে অফিস থেকে ফেরার সময়ে আমার বর ফোনে জানাল তৈরী থাকতে, বাড়ি দেখতে যেতে হবে। এখানে জানিয়ে রাখি, ওদেশে পৌঁছনোর পরদিনই যোগাযোগের সুবিধার্থে ওদেশের এক জোড়া সিম কিনে নেওয়া হয়েছিল।
নতুন বাড়ি খোঁজা
যে ব্যক্তিটি আমাদের বাড়ি দেখাতে নিয়ে গেছিলেন তাঁকে নিয়েই কিছু কথা বলব এবার। তাঁর নামটা মনে আছে অবশ্য। ইংরেজী সিনেমার নায়কের মতো চেহারা – কালো স্যুট-টাই পরা ছ’ফুটের ওপর লম্বা। নিজের গাড়ি করে নিয়ে গেলেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ি দেখাতে।
মূল শহর থেকে একটু দূরে পাহাড়ের পাদদেশে একটা বাড়ি আমরা পছন্দ করলাম। বাড়িটা পছন্দ হওয়ার মূল কারণটাই ছিল মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য। চার তলা বাড়ির একদম উপরতলায় ২ কামরার ফ্ল্যাট, লিফ্ট নেই জেনেও এই বাড়িটাই নিলাম।
বাড়ির মালকিন আলাদা ফ্ল্যাটে থাকেন কিছুটা দূরে। একেবারেই ইংরেজী বোঝেন না। তাঁর সাথে যাবতীয় কথা বলে আমাদের সমস্ত সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতেন সেই ভদ্রলোকটি। কীভাবে পারমিট করাতে হবে, কীভাবে ব্যাঙ্কে একাউন্ট খুলতে হবে সব দায়িত্বই ছিল তাঁর। এমনকি দেশে ফেরার আগে মালকিনের সাথে সমস্ত বোঝাপড়ার দায়িত্বও ছিল তাঁরই হাতে, তাই দেখা হয়েছে কয়েকবার। এত নিপুণ ভাবে সব সমস্যার সমাধান করে দিতেন যে আজও মনে রয়ে গেছে।
ট্যাবলেট কিনতে গিয়ে
এবার যে ঘটনাটার কথা বলব সেটাও বেশ অভিনব। নতুন বাড়িতে সংসার তো পাতা হল। অফিস থেকে ফোন আর ইন্টারনেটের ব্যবস্থাও হল। হলে কী হবে, বর অফিসে চলে গেলে সারাদিন আমার কাছে বই পড়া, গান শোনা কোন কিছু করারই উপায় থাকছেনা। তখন তো মুঠোফোনগুলোও স্মার্ট হয়ে ওঠেনি। কী করি সারাটাদিন।
এদিকে আমাদের ডাকবাক্সে প্রায়দিনই দেখতাম বিভিন্ন দোকানের জিনিসপত্রের বিজ্ঞাপণের কাগজ দিয়ে যেত। সেই কাগজগুলোই ঘরে নিয়ে এসে চোখ বোলাতাম। সেখান থেকেই একদিন একটি সস্তা ট্যাবলেটের (Tab) খোঁজ পেলাম। দোকানটার নাম ‘কনরাড’- সব রকম ইলেক্ট্রনিক জিনিস পাওয়া যায় ওখানে। ট্যাবটাই কিনব ঠিক হল।
পথ হারিয়ে
এক শনিবার সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম। কাছেই রেল স্টেশন, আমরা ধরেই নিয়েছিলাম একটা মানচিত্র জোগাড় করতে পারলেই দোকানটায় পৌঁছে যাব। ইনফরমেশন সেন্টার থেকে মানচিত্রও জোগাড় হল। সেন্ট্রাল স্টেশনের ওপারে গেলাম সুড়ঙ্গ পথে, মানচিত্র দেখে কিছুটা পথ গেলামও। তারপর থৈ হারিয়ে মানচিত্র হাতে একপাশে দাঁড়িয়ে পড়লাম দুজনে, তর্ক-বিতর্কও চলল খানিক।
হঠাৎ স্থানীয় এক ভদ্রমহিলা এগিয়ে এসে বললেন, “তোমরা কি কোন ঠিকানা খুঁজছ, আমি কি তোমাদের সাহায্য করতে পারি?” আমরা তো হাতে স্বর্গ পেলাম, দোকানের নাম বলতেই বুঝিয়ে দিলেন কীভাবে যেতে হবে হাঁটা পথে। খানিকটা যাওয়ার পর আমরা সেদিন আবার রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছিলাম।
আবার মানচিত্র খুলতে দেখে এগিয়ে এলেন স্থানীয় এক ভদ্রলোক, তাঁর গন্তব্য একই রাস্তায় ছিল ভাগ্যিস, তাই আমাদের সাথে নিয়ে গিয়ে দোকানটা দেখিয়ে দিলেন তিনি। এভাবে ওঁনারা এগিয়ে না আসলে আমার ট্যাবটা আদৌ কেনা হত কিনা বলা মুশকিল। পরবর্তী দিনগুলোতে এই দোকানটা থেকেই আমাদের বহু কিছু কেনা হয়েছিল । অবশ্য পরে আমরা বাসে করেই যেতাম দোকানটায়।
ট্যাবটা পাল্টাতে হল
দেখতে দেখতে শীতকাল চলে এল। গ্রীষ্মকালে ইউরোপে ভোর পাঁচটা বাজলেই আলো ফোটে আবার রাত ১১ টাতেও সূর্যের আলো দেখা যায়। এদিকে শীতকালে সূর্যের আলো থাকে সকাল ন’টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। সে বছর খুব বরফও পড়েছিল মনে আছে।
যেদিন প্রথম বরফ পড়ার পূর্বাভাস ছিল ঠিক তার আগের দিন থেকে আমার ট্যাবটা বিগড়ে গেল। গ্যারান্টী পিরিয়ডের মধ্যে থাকলে খারাপ জিনিস ওখানে বদলে দিত। কেনার একমাসের মধ্যেই একবার খারাপ হয়েছিল, তখনও একবার বদলান হয়েছিল। আবার খারাপ হয়েছে তাই আবার দেখাতে নিয়ে যাওয়া হবে ঠিক হল। সেদিনটাও ছিল শনিবার, দুপুরের খাওয়া সেরে বেরলাম, ট্রেনে করে সেন্ট্রাল স্টেশনে নেমে কোন বাস ধরতে হয় তা জানাও হয়ে গেছে ততদিনে।
যাই হোক, নতুন একটা ট্যাব নিয়ে আমরা তখন ফিরতি পথের একটা বাস স্টপে দাঁড়িয়ে, ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি, তার ওপর আবার বরফ পরার কথা বিকেলের দিকে। আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিন্দুমাত্র অনাবৃত স্থান নেই মুখমন্ডল ছাড়া। এদিকে যত ঠান্ডাই পরুক আমার বর পায়ে জুতো মোজা পরতে রাজী হন না সহজে।
হিমশীতল আবহাওয়ায়ে
আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন স্থানীয় এক বয়স্ক মহিলা, তাঁরও আপাদমস্তক ঢাকা। ওদেশের বয়স্ক মানুষরা অনেকেই জার্মান ছাড়া আর কোন ভাষা জানেন না। তিনি আমার বরের পায়ে খোলা চটি দেখে পুরো আৎকে উঠলেন। নিজের পায়ের জুতো এবং আমার পায়ের জুতো দেখিয়ে জার্মান ভাষাতেই বারংবার বোঝালেন “এই ঠান্ডায় খোলা চটি পরবে না কখনো, আঙ্গুল জমে যাবে, হাঁটতে কষ্ট হবে।” ওনার এই আন্তরিকতার জন্যই ঘটনাটা আজও মনে রয়ে গেছে। যদিও আমার বর এরপরেও খোলা চটি পরেই ঘুরে বেরিয়েছে নিশ্চিন্তে। তার ঠান্ডা না লাগলে আমি আর কী করব।
বসন্ত এসে গেল
শীতকাল পেরিয়ে আবার গ্রীষ্মকাল এল, দিন বড় হতে লাগল। চারিদিকের রিক্ত শুস্ক প্রকৃতিতে একটু একটু করে রং ফিরে এল। আমিও আবার বিকেল বেলা হলেই নদীর ধারে-পাহাড়ের মাথায় হাঁটতে যেতে শুরু করলাম। আমার হাঁটার পথে একটা ওষুধের দোকান ছিল। প্রতিদিন দেখতাম স্থানীয় মানুষজন সারিবদ্ধ ভাবে দোকানে ঢোকে, ওষুধ কেনে। ও দেশের বেশিরভাগ ওষুধের দোকানেই দেখেছি কর্মচারী মহিলা। কাউন্টারের ওপারে থাকা বেশিরভাগই অল্পবয়সী মহিলা- ছিপছিপে এবং সুন্দরী সে কথা বলাই বাহুল্য।
রক্তচাপ কত
একদিন দেখলাম, দোকানের কাঁচের দরজায় লেখা আছে ৫০ সেন্টের বিনিময়ে ওজন এবং রক্তচাপ মেপে দেওয়া হবে । ওদেশের ৫০ পয়সা মানে আমাদের ৩৫ টাকা মতন তখন। পরদিন আমিও যাব ঠিক করলাম। সেদিন দোকানে খদ্দের ছিলেন ২-৩ জন মতন।
আমি সামনে পৌঁছে জানালাম আমার আর্জি। কাউন্টারের ওপারে থাকা মহিলাটি আমাকে ২-৩ মিনিট অপেক্ষা করতে বলে একটু ভিতরে গেলেন, আমি একটি মোড়ায় বসলাম। ৭-৮ মিনিট পার হয়ে যাবার পর সেই মহিলাটি ছুটে এলেন। হাত ধরে বারবার বললেন “আমি অত্যন্ত দুঃখিত, আমি তোমাকে বেশীক্ষণ অপেক্ষায় রেখেছি, তুমি ক্ষমা করে দাও।”
এরকমও মানুষ হয়
আমি তো হতভম্ব, আমি নিজের দেশে যে কোন পরিষেবা পেতে এর থেকে ঢের বেশী সময় অপেক্ষা করতে অভ্যস্ত, এই ভদ্রমহিলা দুঃখিত হওয়ায় আমি আরো বেশি লজ্জিত হলাম। সেদিন খুব যত্ন সহকারে ওজন এবং রক্তচাপ মেপে একটা কার্ডে লিখে দিলেন। কিন্তু অনেকবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ওই ৫০ সেন্ট কিছুতেই নিলেন না। জানালেন, “আমি তোমাকে অনেক বেশি সময় অপেক্ষা করিয়েছি, তাই এই পয়সাটা আমি তোমার থেকে নিতে পারবনা।” কার্ডটা সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। এই মানুষটিকে কী আর ভুলতে পারি।
এরপর ওদেশে থাকাকালীন প্রয়োজনে চিকিৎসালয়েও গেছি। প্রথমে একটা সাজানো প্রতীক্ষালয়ে বসতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে চিকিৎসক নিজে এসে নিয়ে গেছেন নিজের ঘরে। রোগীকে পরীক্ষা করে প্রেসক্রিপশন সহ দরজা অবধি পৌঁছে দিয়ে পরবর্তী রোগীকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার রীতি দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
বাহন কার্ড
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পরিবহন ব্যবস্থা বেশ অন্য রকম। ওদেশে বাস-ট্রাম-ট্রেন-ফেরী সবই একই সরকারী পরিবহন সংস্থার অধীন, তাই নির্দিষ্ট দূরত্বের টিকিটে আমি যে কোন ধরনের যান বাহনে উঠতে পারি – আলাদা ভাবে টিকিট কাটতে হয় না। আবার সারাবছরের যানবাহনের খরচা একটু সুলভে হয় যাতে তার জন্য ওদেশে একটি বাৎসরিক বাহন-কার্ড করানোরও ব্যবস্থা ছিল, প্রত্যেক মাসে একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিত। আমাদের বাৎসরিক বাহন কার্ডে প্রথম মাসে দু’বার টাকা কেটে নিয়েছিল ভুলবশতঃ।
একটু বিচলিত হয়েই সেন্ট্রাল স্টেশনে অনুসন্ধান কেন্দ্রে গিয়ে ঘটনাটা জানালাম। কউন্টারে থাকা অফিসারটি জার্মান ভাষায় একটি অভিযোগপত্র লিখে জমা দিতে বললেন। এদিকে আমরা তো জার্মান ভাষা জানিনা। তাই শুনে অফিসার নিজেই লিখে দিলেন চিঠিটা, আমাদেরকে শুধুই হস্তাক্ষর করে দিতে বললেন চিঠির নিচে। যথাসময়ে সেই টাকা ফেরৎ চলে এল একাউন্টে।
আন্তরিকতার ছোঁয়া
এভাবেই প্রতিদিনের জীবনে যে মানুষের সাথেই দেখা হয়েছে তাঁর ব্যবহারেই পেয়েছি আন্তরিকতার ছোঁয়া। প্রতিদিন প্রতিক্ষণে প্রত্যেকটি মানুষকে দেখেছি নিয়ম মেনে চলতে, সারিবদ্ধ ভাবে কেনাকাটা করতে কিংবা ট্রেন-বাসে ওঠা-নামা করতে। মুখোমুখি হওয়া প্রতিটা মানুষ পরস্পরকে অভিবাদন জানায়, প্রয়োজনে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে অনায়াসে। কারোর কাছে কোন কিছু জানতে চাইলে ইংরেজী না জানা বাসিন্দা ইংরেজী জানা কাউকে ডেকে এনেছেন আমাদের সাহায্য করার জন্য।
আমি চির কৃতজ্ঞ এই মানুষগুলোর কাছে। এই দেশটা ছেড়ে আসতে আমার সত্যিই খুব কষ্ট হয়েছিল।
ভ্রমণ পিপাসু | ট্র্যাভেল ব্লগার | ওয়েব ডেভেলপার | গ্রাফিক্স ডিজাইনার